বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
যেসব কারণে ড. ইউনূসের জন্য সক্রিয় ওবামা-হিলারি

যেসব কারণে ড. ইউনূসের জন্য সক্রিয় ওবামা-হিলারি

স্বদেশ ডেস্ক:

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হয়রানি বন্ধের’ জন্য শেখ হাসিনার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে একের পর এক বিবৃতি সেটি ইঙ্গিত করে।

হঠাৎ করে অধ্যাপক ইউনূস ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এতটা সোচ্চার হয়ে উঠলেন কেন?

প্রথমে অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করে একটি ব্যক্তিগত চিঠি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একদিন পরে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্বের ১৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ ও সুপরিচিত ব্যক্তি। যেখানে বারাক ওবামাসহ এক শ’র বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।

শুধু খোলা চিঠি নয়, একদিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে আহ্বান জানিয়েছেন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা আগে থেকেই চলমান ছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের খোলা চিঠি যেদিন প্রকাশ পায় সেদিনও নতুন করে আরো ১৮টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইউনূসকে নিয়ে উদ্বেগ কেন?
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওই খোলা চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূসের বিষয়টি ছাড়াও আরো দুটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের আগের দুটি নির্বাচনের বৈধতার সংকট আছে এবং আগামী নির্বাচনের দিকে তাদের নজর থাকবে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তারা।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ড. ইউনূস একজন বৈশ্বিক সেলেব্রিটি এবং সে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক প্রভাবশালী বন্ধু তার আছে।

‘আমি মনে করি ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেজন্যই তার প্রভাবশালী বন্ধুদের এক জায়গায় এনেছেন তাদের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। কারণ তিনি জানেন তার পক্ষে এসব বড় বড় নামগুলোর একটি শক্ত প্রভাব আছে। বিশেষ করে চিঠিটি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় সরকার এখন চাপে পড়েছে।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্টের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা ও সুশাসনের অভাব থাকায় ড. ইউনূস ন্যায়বিচার পাবেন না বলে আন্তর্জাতিক মহলে একটি উদ্বেগ ও ধারণা আছে।’

‘এখন তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য একটি তড়িঘড়ি করার চেষ্টা দৃশ্যমান হওয়ায় তা নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা উদ্বিগ্ন হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন,’ বলেন প্রফেসর রীয়াজ।

‘সেলেব্রিটিদের ব্যবহার করেছেন’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অধ্যাপক ইউনূস ইস্যুটিকে ‘আইনগত ব্যাপার’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও পশ্চিমা বিশ্বে সেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ‘ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির শিকার হয়েছেন’।

ক্ষমতাসীনরা মনে করে, অধ্যাপক ইউনূস ‘আইনগত ব্যবস্থা থেকে নিষ্কৃতি’ পাবার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

‘ড. ইউনূস জানেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যথার্থ এবং সে কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে নিতান্ত ব্যক্তিস্বার্থেই তিনি তার বন্ধু সেলেব্রিটি ব্যক্তিদের ব্যবহার করেছেন,’ বলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

মাহমুদ আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে সম্প্রতি কূটনীতিকদের সাথে একাধিক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মঙ্গলবার বলেছেন যে- কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সেই শ্রমিকের পক্ষে শ্রম আদালতে মামলা হলে তার কিছু করার নেই।’

খোলা চিঠির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তার কিছুই করার নেই। বরং তিনি বিবৃতি দাতাদের বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো যাচাই করার পাল্টা আহ্বান জানিয়েছেন।

নির্বাচনের সাথে যোগসূত্র?
বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য শেখ হাসিনার সরকারের উপর আমেরিকার চাপ এখন দৃশ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক এক ধরনের অস্বস্তির ভেতরে দিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে যাচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ইউনূস ইস্যুটি সামনে আসলো।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি এবং অধ্যাপক ইউনূস ইস্যুতে বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিদের সোচ্চার হওয়া- এ দুটো বিষয়ের মধ্যে ‘অনানুষ্ঠানিক যোগসূত্র’ থাকতে পারে।

যদিও আওয়ামী লীগ নেতা =মাহমুদ বলছেন, বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আলোচিতরা সাবেক রাজনীতিক এবং তারা তাদের ব্যক্তিগত ইস্যুতে কথা বলছেন, যার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সম্পর্ক নেই।

তবে আলী রীয়াজ বলছেন, বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্বরা প্রশাসনে না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাদের মতামতের গুরুত্ব আছে, তাদের ক্ষমতা নেই কিন্তু প্রভাব আছে।

‘তবে এগুলো না দেখে বাংলাদেশের সরকারের দেখা উচিত তারা ড. ইউনূসকে হয়রানি করছেন কিনা। আর একটি বিষয় মানতেই হবে যে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে নির্বাচন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এ পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি। এ কারণেই হয়তো বিবৃতিটা এখন এসেছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

সরকারের ওপর চাপ তৈরি?
ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে অনেকে মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা সরকারের ওপর যে চাপ তৈরি করেছে সেটির জবাব দিতে চায় সরকার। অধ্যাপক ইউনূস যেহেতু পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, সেটিও তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার একটি কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি ড. ইউনূসের চলমান মামলার বিচার প্রক্রিয়া যেমন দ্রুততর হয়েছে তেমনি নতুন করে আরো মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

‘অধ্যাপক ইউনূস ইস্যুতে যতটা অগ্রগতি হয়েছে বা মামলাগুলো যত দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা হচ্ছে তাতে তাড়াহুড়োটা পরিষ্কার। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সে কারণে এ সময়ে ওই বিবৃতির অন্য উদ্দেশ্য খুব একটা খুঁজে পাবেন না। তবে বিবৃতিতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও মতামত আছে,’ বলছিলেন রীয়াজ।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভিন্নমতের ওপর চাপ বা নিপীড়ন আছে। আর অন্য বিষয়টি হলো সামনের নির্বাচনের দিকে তারা তাকিয়ে আছে।

‘ড. ইউনূসের মামলার মেরিট নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের বাইরে প্রশ্ন আছে। সেটিই আসলে এ সময়ে বক্তব্য দেয়ার মূল কারণ বলে মনে হয় আমার,’ রীয়াজ বলছিলেন।

তবে মঙ্গলবারে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার সাথে সরকারের সম্পৃক্ততার কথা একেবারেই নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘কোনো ব্যক্তিকে একেবারে আইনের আওতার বাইরে রাখার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশসহ কোনো দেশের সংবিধানে নেই। একজন মানুষ সবচেয়ে জনপ্রিয় হতে পারেন কিন্তু তাকে আইনের পরিসীমার বাইরে রাখা যায় না,’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মাহমুদ।

এছাড়া নির্বাচন নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যে বক্তব্য এসেছে সেটিও তার ভাষায় ‘নতুন কিছু নয়’।

‘তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমরাও সেটাই চাই। এর সাথে ড. ইউনূসের ইস্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করেছে। এটা তো সরকারের বিষয় না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মাহমুদ।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877